লেটেস্ট

Post Top Ad

Your Ad Spot

Thursday, June 11, 2020

ব্যবহৃত বাইসাইকেল কেনার সময় লক্ষনীয় বিষয়সমূহ

গ্রুপে গ্রুপে নিয়মিত পোস্ট আসে, ব্যবহৃত সাইকেল কেনার সময় কি কি বিষয় লক্ষ করতে হবে। যেহেতু পোস্টগুলো গ্রুপ এক্টিভিটির কারনে কিছুক্ষন পরেই হারিয়ে যায়, তাই ভাবলাম একটি পার্মানেন্ট ডকুমেন্ট বানিয়ে ফেলি। কমন কিছু সেফটি চেক বিস্তারিত লিখার চেষ্টা করলাম, যাতে সবার কিছুটা হলেও উপকার হয়।


১। ফ্রেম - ফ্রেম সবথেকে গুরুত্বপুর্ন ফ্যাক্টর। ফ্রেম ঠিক না থাকলে সাইকেলে আর যাই লাগানো থাকুক, কোনো লাভ নেই। তাই ফ্রেমটি খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করতে হবে। ফ্রেমে ক্র্যাশ বা এক্সিডেন্টের ফলস্রুতিতে কোনো ফাটল বা ক্ষত আছে কিনা, এবং ফ্রেমের কোনো টিউব বেঁকে গেছে কিনা, তা ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করতে হবে। বিশেষ করে সিটপোস্ট ক্ল্যাম্পের কাছের অংশ, বটম ব্র্যাকেট এর চারপাশে এবং নিচের টিউবের দিকে ভালোভাবে লক্ষ করুন। এইজন্যে, যার কাছ থেকে সাইকেল কিনছেন, তাকে বলুন সাইকেল ভালোভাবে ওয়াশ করে তারপর দেখাতে। অনেক সময় কাদা লেগে থাকার ফলে সুক্ষ সমস্যা বোঝা যায়না। তাই সাইকেলটি একদম ক্লিন অবস্থায় পর্যবেক্ষন করতে হবে। ফ্রেমে এইধরনের সমস্যা থাকলে সেটা না কেনাই যৌক্তিক সিদ্ধান্ত।


২। এলয়/স্টিল রিম - ফ্রেম পর্যবেক্ষনের মতো একইভাবে, রিমে ফাটল আছে কিনা এবং রিম জয়েন্টটি অস্বাভাবিক লাগছে কিনা, পর্যবেক্ষন করে দেখতে হবে। চাকা ঘুরিয়ে লক্ষ করুন রিমে অস্বাভাবিক টাল আছে কিনা। পাশাপাশি টাল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সহজে ঠিক করে ফেলা যায় সার্ভিসিং এ নিয়ে; যদি উপর-নিচ টাল বা Radial Untrue থাকে সেটাও ঠিক করা যায় (কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটা সীমা পর্যন্ত)। অস্বাভাবিক টাল থাকলে এভয়েড করা ভালো, কারন সেটা ক্র্যাশ বা এক্সিডেন্টের ফলে হয়ে থাকতে পারে, যা রিমের স্থায়ীত্বে কিছুটা হলেও ইম্প্যাক্ট করে। ভি-ব্রেক রিমের ক্ষেত্রে সাইডওয়াল যেটি ক্যালিপারের সাথে ঘর্ষন করে, সেটি ভালো অবস্থায় আছে নাকি খুব বেশি ক্ষয়ে গেছে লক্ষ করুন। বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হলে সম্পূর্ন রিমটি বদলাতে হতে পারে।


৩। শিফ্‌টিং - প্রপারলি গিয়ার শিফ্‌ট হয় কিনা দেখে নিন। গিয়ার ঠিকমতো টিউন বা ইনডেক্সিং না করা থাকলে অথবা গিয়ার কেবল গ্রিজিং না করা থাকলে ঠিক মতো শিফ্‌ট হবেনা, যেটা ঠিক করা মেকানিকের জন্য কয়েক মিনিটের কাজ। অর্থাৎ এটি কোনো স্থায়ী সমস্যা না। কিন্তু, যদি শিফ্‌টার এর ভেতরের মেকানিজমে সমস্যা থাকে, আটকে যায়, সেক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্থ পার্টটি রিপ্লেসেবল কিনা তা মেকানিককে দেখিয়ে নিন। শিফ্‌টিং সংক্রান্ত বেশিরভাগ সমস্যাই সহজে ঠিক করা যায় এবং কিছু ক্ষেত্রে স্পেসিফিক কম্পোনেন্ট যেমন শিফ্‌টার, গিয়ার কেবল, হাউজিং ইত্যাদি চেঞ্জ করলেই হয়।


৪। হাব/বিয়ারিং - হাব গুলো স্মুথলি ঘুরছে কিনা চেক করে দেখুন। কোনো অস্বাভাবিক শব্দ বা ফ্রিকশন টের পাওয়া যাচ্ছে কিনা, চাকা ঘুরতে গিয়ে বাধা পাচ্ছে কিনা, থেমে যাচ্ছে কিনা দেখুন। ক্ষেত্রবিশেষে বিয়ারিং বল পরিবর্তন করে, এক্সেল পরিবর্তন করে, গ্রিজিং করে বা সম্পুর্ন হাবটিই পরিবর্তন করে সমাধান পাওয়া যায়।


৫। ব্রেকিং – ভি-ব্রেকের ক্ষেত্রে ব্রেক আর্ম এলাইনমেন্ট চেক করুন। দুইটি আর্ম সাধারনত রিম থেকে একই দূরত্বে থাকবে এবং ব্রেক লিভার চাপলে একসাথে রিমে এসে প্রেশার দিবে। এলাইনমেন্টের সমস্যা হলে আর্ম স্প্রিং টাইট বা লুজ করে ঠিক করা যায় সার্ভিসিংয়ে নিয়ে। মেকানিক্যাল ও হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেক’এর ক্ষেত্রে ডিস্কটি টাল কিনা চেক করুন। দক্ষ মেকানিক ডিস্ক এর টাল ঠিক করে দিতে পারবে কেবল হাউজিং গুলো ভালো ভাবে চেক করুন, ভাঙ্গা বা টুইস্টেড কিনা। টুইস্টেড কেবলের ভিতর দিয়ে ব্রেক কেবল ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারেনা, আর হাইড্রলিং ব্রেক হলে ফ্লুইড লিক করে ব্রেক অকার্যকর হতে পারে।


৬। কুইক রিলিজ – সাইকেলটির চাকা কুইক রিলিজ সিস্টেম হলে খুব ভালোভাবে চেক করুন। কুইক রিলিজ অনেক ভাইটাল কম্পোমেন্ট, এটিতে সমস্যা থাকলে মারাত্বক এক্সিডেন্ট হতে পারে। কুইক রিলিজ ঠিকমতো টাইট দেয়ার পর চাকায় প্রেশার দিলে এবং সাইকেল চালানোর পর তা আগের মতো থাকছে কিনা, লক্ষ করুন। কুইক রিলিজ বার বার লুজ হয়ে গেলে ক্ষতিগ্রস্থ অংশ রিপ্লেস করে ফেলা উচিত।


৭। সাসপেনশন ফর্ক – ফর্কে প্রেশার দিলে আটকে যায় কিনা লক্ষ করুন। কয়েল ফর্ক হলে ফর্ক পারফর্ম্যান্স স্মুথ কিনা দেখে নিন, অস্বাভাবিক কোনো শব্দ হলে বা আটকে গেলে সাইকেলটি কেনার আগে মেকানিককে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করুন ঠিক হবে কিনা। ফর্ক স্ট্যাঞ্চিয়নগুলোতে কোনো মরিচা আছে কিনা দেখুন।


৮। হেডসেট – সামনের ব্রেক চেপে হ্যান্ডেলবার সামনে-পেছনে পুশ করে হেডসেট লুজ কিনা লক্ষ করুন। লুজ হেডসেট সাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে রিস্কি। এটা মূলত সঠিকভাবে টাইট দিয়ে ঠিক করা যায়, কিন্ত কোনো কোনো ক্ষেত্রে পার্টস রিপ্লেস করতে হতে পারে। এক্ষেত্রে সাইকেলটি কেনার আগে মেকানিককে দেখিয়ে নিন অথবা এক্সেসরিজ শপে ওই সাইকেলের সাথে কমপ্যাটিবল অংশটি পাওয়া যায় কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন।


৯। বটম ব্র্যাকেট – প্যাডেলিং করে দেখুন বটম ব্র্যাকেট স্মুথ কিনা, কোনো অস্বাভাবিক শব্দ, ফ্রিকশন, বা বাধা পাচ্ছে কিনা। গ্রিজিং অথবা ব্র্যাকেটটি রিপ্লেস করে সমস্যা সমাধান করতে হয়।


১০। ক্যাসেট/ফ্রিহুইল, চেইন, ক্র্যাংকসেট – দুই ব্রেক চেপে ধরে জোরে পেডেল চেপে দেখুন চেইন কিংবা ক্যাসেট স্লিপ করে কিনা। যদি চেইন ক্র্যাংকের দাতগুলোতে স্লিপ করে তাহলে ক্র্যাংক পরিবর্তন করতে হতে পারে। যদি ফ্রিহুইলটি সামনে স্লিপ করে তাহলে সেটিও পরিবর্তন করতে হতে পারে। চেইন ক্র্যাংকের বড় চেইনরিং’এ থাকা অবস্থায় হাত দিয়ে বাইরের দিকে টান দিয়ে দেখুন, যদি বেশি লুজ মনে হয় তাহলে চেইন পরিবর্তন করতে হতে পারে। ক্র্যাংক আর্ম দুটো পাশাপাশি প্রেশার দিয়ে দেখুন লুজ মনে হচ্ছে কিনা।

এই সেফটি চেকগুলো করে নিলে সাইকেলের কন্ডিশন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া যাবে। এর মধ্যে বেশিরভাগ সমস্যাই সমাধান করা সম্ভব, তবে সেক্ষেত্রে বাড়তি টাকা খরচ হবে; সুতরাং যার কাছ থেকে সাইকেলটি কিনছেন, তাকে দাম কমাতে বলুন অথবা সার্ভিসিং করিয়ে দিতে বলুন। শুধুমাত্র ফ্রেমের কোনো সমস্যা থাকলে সাইকেলটি না কেনাই ভালো। কারন ফ্রেম বাদে অন্য সকল পার্টস রিপ্লেস করা সম্ভব। আর হ্যা, সবার আগে দেখুন, সাইকেলের মানি রিসিপ্ট আছে কিনা। না থাকলে সাইকেলটি চোরাই হবার সম্ভাবনা আছে।


নিচে একটি সেফটি চেক ভিডিও লিঙ্ক দিয়ে দেয়া হলো, ইউটিউবে এরকম অনেক ভিডিও আছে, সময় করে দেখে নিতে পারেনঃ


যেকোনো সাজেশন, সংশোধন, পরিবর্ধন সাদরে গ্রহনযোগ্য। ধন্যবাদ।
** লেখাটি একইসাথে আমার এক্সপেরিমেন্টাল ব্লগ এ প্রকাশিত।

©MAROOF IBN MANNAN

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

Your Ad Spot