ডিফেন্সিভ ড্রাইভিং এক ধরণের ড্রাইভিং দক্ষতা যা দূর্ঘটনা এড়াতে গুরুত্মপূর্ন ভূমিকা রাখে। অনেক দেশেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য চালককে ডিফেন্সিভ ড্রাইভিং এর কোর্স করতে হয়। ডিফেন্সিভ ড্রাইভিং এর মূল বিষয়গুলি আমাদের দেশের সাইকেল চালকদের জন্য রূপান্তর করে আমি ডিফেন্সিভ রাইডিং বলে কিছু নীতিমালা তৈরী করেছি। সেগুলি নিয়েই এই আলোচনা। আপনি দক্ষ রাইডার, নিয়ম মেনে চালান। তারপরও অন্যের ভুলের জন্য আপনি দূর্ঘটনায় পড়তে পাড়েন। ডিফেন্সিভ রাইডিং চর্চা করলে আপনি সে সম্ভাবনা কমিয়ে আনতে পারেন। কিভাবে করবেন ডিফেন্সিভ রাইডিং?
১। রাস্তায় সতর্ক থাকুন। অন্য যানবাহনের প্রতি খেয়াল রাখুন। কখনোই অনুমান করবেন না অন্য চালকরা নিয়ম মেনে চালাবে। অনুমান করার চেষ্টা করুন অন্যরা কি অস্বাভাবিক কাজ করতে পারে। যদি কেউ তা করে ফেলে আপনি কিভাবে নিজেকে বাঁচাবেন আগেই ভেবে রাখুন। রাস্তার মাঝে বাস থেমে যাত্রী নামানো শুরু করতে পারে, অথবা পথচারী ঠিক আপনার সামনে দিয়ে দৌঁড়ে রাস্তা পার হবার সিদ্ধান্ত নিতে পারে, বা রিক্সাওয়ালা/সিএনজিওয়ালা ভেবে বসতে পারে বাম দিক থেকে এসে আপনার সামনেই সে ডানে মোড় নেবে। কোন সম্ভাবনাকেই উড়িয়ে দিবেন না।
২। সম্পূর্ণ মনযোগ রাস্তা এবং ট্রাফিকের প্রতি রাখুন। ব্যস্ত রাস্তায় সাইকেল চালানোর সময় ফোনে কথা বলা, সেলফি তোলা, ধূমপান করা ইত্যাদি কাজ থেকে বিরত থাকুন।
৩। বিশেষ করে মোড় পার হবার সময় অন্য চালকদের সাথে দৃষ্টি সংযোগ স্থাপন করুন। আপনি কি করতে যাচ্ছেন তা অন্য চালকদের বুঝতে দিন। তারা কি করবে আপনি বোঝার চেষ্টা করুন।
৪। মনে রাখবেন আপনি যত জোরেই সাইকেল চালান না কেন, যন্ত্রচালিত যানবাহনের তুলনায় আপনার গতি ধীর। খেয়াল রাখুন আপনার ধীর গতির জন্য পেছনের যানবাহনকে যেন গতি কমাতে না হয়। প্রয়োজনে রাস্তার বামে চেপে এসে পেছনের দ্রুত গাড়িকে যাবার সুযোগ করে দিন। ওভারটেক করার সময় অবশ্যই পেছনে খেয়াল করুন আপনার ওভারটেকিংএর জন্য পেছনের কাউকে ব্রেক চাপতে হয় কিনা। সেরকম পরিস্থিতি হলে ওভারটেক করা থেকে বিরত থাকুন। স্মরণ রাখুন, আপনার জন্য পেছনের চালককে গতি কমাতে হলে কোন না কোন সময় সে ভুল করবেই। তখন আপনার পরিণতি কি হতে পারে তা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিন।
৫। যথাসম্ভব সরলরেখায় চালানোর চেষ্টা করুন। জিগজ্যাগভাবে চালাবেন না। এতে অন্য চালকরা আপনার সাইকেলের গতিপথ নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়বে। তাদের বিভ্রান্তি আপনার জন্য বিপদজনক।
৬। ডাইনে/বায়ে মোড় নেবার সময় যথেষ্ট আগে থেকে হাত দিয়ে সংকেত দিন। সংকেত আর উজ্জ্বল পোষাকের মাধ্যমে অন্য চালকদের কাছে নিজেকে দৃশ্যমান রাখুন। এমন পরিস্থিতি কখনোই সৃষ্টি করবেন না যেখানে অন্য চালকরা আপনাকে দেখতে পায় না।
৭। গতি নিয়ন্ত্রণে রাখুন। আপনি যত দক্ষ চালকই হোন না কেন, গতি যত বেশী হবে, প্রয়োজনে থামতে তত বেশী সময় লাগবে। থামতে সময় যত বেশী লাগবে, দূর্ঘটনার সম্ভাবনা তত বাড়বে।
৮। কখনোই ভুলবেন না রাস্তায় অন্য সবার চাইতে আপনি সবচেয়ে নাজুক। যেকোন দূর্ঘটনায়, তা যার দোষেই হোক, আপনার ক্ষতি হবার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশী।
নিরাপদে সাইকেল চালান, অন্যকে নিরাপদে চালাতে উৎসাহিত করুন, প্রিয়জনকে শান্তিতে রাখুন।
©ANISUL HAQUE
No comments:
Post a Comment