লেটেস্ট

Post Top Ad

Your Ad Spot

Friday, June 19, 2020

সাইক্লিং এর সময় নিরাপদ থাকার জন্যে যা মেনে চলতে হবে

সাইক্লিং আমাদের দেশে বর্তমানে একটা ক্রেজ, শুধু আমাদের দেশেই না সমগ্র বিশ্বেই এখন সাইকেল ক্রেজ চলছে। গত কয়েকবছরে নিয়মিত হারে আমাদের দেশে সাইক্লিস্ট বাড়ছে যার পিছনে বিডিসাইক্লিস্টস গ্রুপটি মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। অন্যান্য অনেক দেশেই সাইক্লিং এর জন্যে রাস্তায় আলাদা লেন করে দেয়া হয়েছে এবং রাস্তা-ঘাট খানা-খন্দর মুক্ত হওয়ায় সাইক্লিং এর জন্যে বেশ উপযুক্ত। ঢাকার রাস্তায় নিয়মিত সাইকেল চালানো অনেকটাই দুঃস্বপ্নের মতো। এখানে ট্রাফিক আইন মানার কোন বালাই নেই, প্রশিক্ষিত ড্রাইভার নেই তার উপর রাস্তা ঘাট এর বেহাল দশা। তাই স্বাভাবিকভাবেই যারা নিয়মিত বাইক রাইডিং করেন তাদের দুর্ঘটনা এড়াতে নিরাপত্তা বজায় রাখা উচিত।



সাইকেল চালানোর সময় নিরাপত্তা কেন জরুরী:

 

আগেই বলেছি ঢাকার রাস্তায় সাইকেল চালানো অনেকটা দুঃস্বপ্নের মতো, যেকোনো সময় যেকোনো মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বজায় রাখার চেষ্টা করা উচিত। নিরাপত্তা বজায় রাখলে যে সবরকম দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে তা না, তবে মারাত্মক কিছু ঘটা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে নিশ্চিতভাবে। নিরাপদ থাকার জন্যে কি কি দরকার এবং কি করণীয় তাই তুলে ধরা হবে এই পোস্টে।

 

হেলমেট:

 

সাইকেল আরোহীদের জন্যে হেলমেট অত্যাবশ্যক। মাথার যেকোনো আঘাত এড়ানোর জন্যে হেলমেট পড়তেই হবে।  অনেকেই হয়তো লজ্জায় সাইকেলের সাথে হেলমেট যায়না ভেবে হেলমেট পড়াটা এড়িয়ে যান, আবার অনেকের ধারণা যে দুর্ঘটনার সময় সাইকেলের হেলমেট নিরাপত্তার জন্যে কোন ভূমিকাই রাখেনা, যা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। বেশির ভাগ মারাত্মক দুর্ঘটনা থেকে দারুণভাবে বাঁচিয়ে দিবে হেলমেট। দুর্ঘটনায় মাথা কোন কিছুর সাথে ধাক্কা লাগলে বা মাটিতে পড়ে গেলে সেটা সরাসরি মাথায় না লেগে হেলমেটে লাগবে, যার ফলে মাথা ফাটা বা তার চেয়েও মারাত্মক কিছু এড়ানো যাবে। তবে সাধারণ হেলমেট না কিনে কিছু টাকা বেশি দিয়ে হলেও ব্র্যান্ডের হেলমেট কেনা উচিৎ। অবশ্যই সামান্য কিছু টাকার চেয়ে আমার নিরাপত্তাটা বেশি জরুরী।

হেলমেট কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে তা যেন মাথার মাপের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এবং পরিপূর্ণভাবে ফিট হয়।


গ্লভসঃ

 

যেকোনো বাইক দুর্ঘটনায় হাত, মাথা হাঁটু, কনুই এগুলোই সাধারণত আগে মাটিতে হিট করে, তাই এই জায়গাগুলোতেই ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কোন কারণে পড়ে গেলে বা অন্য কোন কিছু হলে হাত মাটিতে পড়ে তালুর চামড়া ছড়ে যেতে পারে যা মারাত্মক কষ্টের, পাশাপাশি তা সেরে উঠতেও বেশ সময় নেয়। এছাড়া অন্য কোন ক্ষতিও হতে পারে। ভালো মানের গ্লভস সাইকেল আরোহীর হাতকে দারুণ ভাবে নিরাপদ রাখতে পারবে। ভালো গ্লভস আরোহীকে আরামদায়ক ও ভালো গ্রিপ দেওয়ার পাশাপাশি হাতকেও নিরাপদ রাখছে তাই সাইকেল আরোহীদের জন্যে গ্লভস ও অত্যাবশ্যক।



 

রাইডের আগে যেসব একটু নজর দিয়ে নিতে হবে:

 

১. চাকা ঠিকভাবে লাগানো আছে কিনা আর সঠিকভাবে হাওয়া আছে কিনা সেটা দেখে নিতে হবে।

২. ফর্কে কোন সমস্যা আছে কিনা আর সেটা ঠিক মতো কাজ করছে কিনা সেটা দেখতে হবে।

৩. সামনে এবং পিছে দু’টো ব্রেকই ঠিকমতো কাজ করছে কিনা সেটাও দেখে নিতে হবে।

৪. রাতের বেলায় বের হলে সামনে আর পেছনে লাইট লাগিয়ে নেয়া উচিৎ।

৫.হ্যান্ডেলবার ঠিকঠাক-মতো লাগানো আছে কিনা সেটাও দেখতে হবে।

৬. প্যাডেল ঘুরিয়ে চেইনটাকেও ঠিকমতো দেখতে হবে।

৭. গিয়ার থাকলে গিয়ার শিফটার ঠিকঠাক-মতো কাজ করছে কিনা দেখে নেয়া উচিৎ।

৮. স্যাডেল বা সিট আপনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ উচ্চতায় এবং শক্ত ভাবে আছে কিনা দেখতে হবে।

৯. টায়ারে কোন প্রকার লিক আছে কিনা সেটা দেখে নেয়া উচিৎ।

১০. আলাদাভাবে টিউব নিয়ে নেয়া উচিৎ সেই সাথে টিউবের প্যাচ কিট ও।

১১. পাম্পার নিয়ে নেওয়া উচিৎ, সব থেকে ভালো হয় ছোট হ্যান্ড পাম্পারগুলো নিলে, সেগুলো পরিবহনেও সহজ।

১২ হেলমেট আর গ্লভস অবশ্যই পড়ে নিতে হবে।

১৩. সম্ভব হলে উজ্জ্বল রঙ পড়া উচিৎ যাতে করে সহজেই আশেপাশের চালকরা দেখতে পারে আপনাকে, রাতের বেলায় কালো রঙের কাপড় নাপড়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

১৪. বাইক আরোহী শারীরিক ভাবে ফিট কিনা রাইডের জন্যে সেটাও দেখা উচিৎ।

১৫. রাইডের আগে খানিকটা চালিয়ে কোনরকম সমস্যা আছে কিনা দেখা উচিৎ।

 

রাস্তায় চলার সময় অত্যাবশ্যক নিয়মগুলো:

 

১. ব্যস্ত সড়কে চলার সময় গতি যথাসম্ভব কম আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আঙ্গুল ব্রেইকের কাছাকাছি রাখা উচিৎ যাতে যথাসময়ে ব্যবহার করা যায়। খুব বেশি গতিতে থাকা অবস্থায় হঠাৎ ব্রেইক করতে হলে প্রথমে মোটামোটি ভাবে পেছনের ব্রেইক চেপে সামনের ব্রেইক মোটামোটি ভাবে চাপতে হবে যদি ব্রেইক একদম ঠিকঠাক থাকে। হঠাৎ ভালো স্পিডে থাকা অবস্থায় দুই হাত দিয়ে দু’টো ব্রেক একসাথে চেপে ধরলে উলটে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

২. রাস্তার যথাসম্ভব বাম পাশ দিয়ে চলতে হবে।

৩. বড় গাড়ি আশেপাশে থাকলে সেগুলো থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে।

৪. অভ্যস্ত না হলে ব্যস্ত রাস্তায় হাত ছেড়ে বাইক চালানো উচিৎ না, অভ্যস্ত থাকলেও হাত ছেড়ে না চালানোটাই উত্তম।

৫. কোনভাবেই চলন্ত অবস্থায় গান শোনা বা মোবাইলে কথা বলা যাবেনা

৬. এদিক ওদিক অকারণেই তাকানো যাবেনা এবং অন্য কোন দিকে চেয়ে সাইকেল চালানো উচিৎ না, এতে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

৭.ট্রাফিক আইন মেনে চলা উচিৎ, যদিও বেশিরভাগ সাইকেল আরোহীই সেটা মানেন না। সবারই ধারণা সাইকেলের জন্যে কোন ট্রাফিক নিয়ম নেই, যখন খুশি যেভাবে খুশি চালানো যায়, তবুও সর্বোচ্চ নিরাপত্তার জন্যে ট্রাফিক আইন মেনে চলা উচিৎ।

৮. পার্ক করা গাড়ির খুব কাছে দিয়ে যাওয়া যাবেনা, প্রায় ৯০ ভাগ মানুষই গাড়ির গেইট খোলার আগে বাহিরে দেখে নেন না।

৯. গ্রুপ রাইডের ক্ষেত্রে লেন বজায় রেখে চলা উচিৎ আর যদি সম্ভব হয় পাশাপাশি কথাবার্তা এড়ানোটাই ভালো।

১০. প্রতিটা মোড় ঘোরার আগে গতি নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার এবং অপর পাশ থেকে গাড়ি বা অন্য কোন যান আসতে পারে সেটা ভেবে নিয়েই সাবধান থাকতে হবে।

১১. আমাদের দেশের রিকশাওয়ালারা সবচেয়ে বেপড়োয়াভাবে চালায়। অনেকেই ডানে বা বামে যাওয়ার কোন রকম লক্ষণ না দেখিয়েই চলন্ত অবস্থায় হঠাৎ রিকশা ডানে বা বামে চাপিয়ে নেন যার দরুন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, তাই এমন পরিস্থিতির জন্যে প্রস্তুত থাকা উচিৎ।

১২. রাস্তা পার হওয়ার সময় ডানে বা দেখে নেয়া দরকার।

১৩. চলন্ত অবস্থায় ডান-বামে যাওয়ার জন্যে হাত দেখিয়ে সতর্ক করুন।

১৪. রাস্তার মাঝে চলন্ত অবস্থায় আকস্মিক ব্রেইক করা বিপজ্জনক।

১৫. চলন্ত বাস, ট্রাক গাড়ির সাথে অনেকেই প্রতিযোগিতা শুরু করেন। এ জাতীয় প্রতিযোগিতা নিতান্তই অসুস্থ মন-মানসিকতার পরিচয়। বিশেষ করে যারা নতুন রাইডার তাদের মধ্যে এ বিষয়টি বেশি লক্ষণীয়, এগুলো পরিহার করতে হবে।

সাইকেল যদিও তুলনামূলক ভাবে অনেক নিরাপদ বাহন তবুও হেলায় কাজ করা উচিৎ না। সাইকেল চালানোর সময়েও যথাসম্ভব সাবধানতা অবলম্বন করে উচিৎ যাতে করে দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না… নিরাপদে রাইড করুন।


©Ariful Islam Palash

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

Your Ad Spot